ঘুর্ণিঝড় ইয়াসে ভেঙে যাওয়া বেড়িবাঁধ পরিদর্শনে গিয়ে জনতার রোষানলে পড়েছেন খুলনা-৬ (কয়রা-পাইকগাছা) আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) মো. আক্তারুজ্জামান বাবু। মঙ্গলবার (১ জুন) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে কয়রা উপজেলার মহারাজপুর ইউনিয়নের দশহালিয়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এসময় এমপি আক্তারুজ্জামান বাবুকে বহন করা নৌ যানের (ট্রলার) দিকে কাদামাটি ছোড়ে এলাকাবাসী। বিষয়টি একটি ভিডিওতে ধারণ হয়েছে। সংসদ সদস্যের ট্রলারে কাদা ছোড়ার ওই ভিডিওতে দেখা যায়, বাঁধের কাছে ট্রলার ভেড়ার সঙ্গে সঙ্গে ট্রলারটিকে লক্ষ্য করে বাঁধ মেরামতকারীরা কাদা ছুড়তে শুরু করে। পরে পিছু হটতে শুরু করে ট্রলার। মাইকে উত্তেজিত মানুষকে শান্ত হতে অনুরোধ করতেও শোনা যায়। এদিকে, প্রত্যক্ষদর্শীরা ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করলেও সংসদ সদস্য মো. আক্তারুজ্জামান বাবু ঘটনাটিকে ‘মিথ্যা’ বলে দাবি করেছেন। তিনি বলেন, প্রতিবছর ভাঙনে সেখানকার মানুষ ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন। তাই ঘটনাস্থলে গেলে আমাকে দেখে মানুষ ক্ষোভ প্রকাশ করে টেকসই বেড়িবাঁধের দাবিতে বিক্ষোভ করেন।
এদিকে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, কয়রা উপজেলার মহারাজপুর ইউনিয়নের দশহালিয়া এলাকায় প্রায় ৫০-৬০ জন অনুসারী নিয়ে একটি ট্রলারে করে বাঁধ পরিদর্শনে যান সংসদ সদস্য মো. আক্তারুজ্জামান বাবু। তখন তাকে দেখে বাঁধ মেরামতরত এলাকাবাসী ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। তারা এমপির ট্রলারের দিকে কাদা ছুড়ে তাকে ফিরে যেতে বলেন। এক পর্যায়ে ক্ষিপ্ত এলাকাবাসী নদীতে নেমে পড়ে। পরে এমপি বাঁধ এলাকার একটু দূরে ট্রলার থেকে নামেন। তখন এলাকার আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসেন। এরপর এমপি উপস্থিত এলাকাবাসীর উদ্দেশে মাইকে বক্তৃতা করেন।
প্রত্যক্ষদর্শী মহারাজপুর ইউনিয়নের ৮ নম্বর দেয়াড়া ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য বাবুল হোসেন বলেন, ‘এমপি সাহেব ট্রলারে করে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় গেলে তখন স্বেচ্ছাশ্রমে কাজ করতে থাকা জনগণ তার (এমপি) আসার প্রয়োজন নেই বলে কাদা ছুড়তে থাকেন। একপর্যায়ে পুলিশ ঘটনা নিয়ন্ত্রণ করতে না পারায় স্থানীয় নেতাকর্মীদের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হয়। পরে এমপি বাঁধের কাজ শুরু করতে গেলে অধিকাংশ জনগণ কাজ ছেড়ে চলে যান।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি বলেন, ‘এমপি তার আত্মীয়-স্বজনদের মাধ্যমে কাজ করান। ফলে কাজ ভালো হয় না। একটু ঝড়-বৃষ্টি হলেই বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এতে ভোগান্তির শিকার হয় সাধারণ জনগণ। সে কারণে এমপির ওপর উপজেলার অধিকাংশ মানুষের ক্ষোভ রয়েছে। এটি তার বহিঃপ্রকাশ।’ কয়রা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এস এম শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘সাধারণ মানুষের সঙ্গে মিলে আমরা কাজ করছিলাম। এমন সময় সংসদ সদস্য একটি ট্রলারে করে এলাকা পরিদর্শনে আসেন। তবে সাধারণ মানুষ তাঁকে লক্ষ্য করে কাদা ছুড়ে মারতে থাকে। এতে এমপি সাহেবের শরীরেও কাদা লেগে যায়। অনেক চেষ্টা করেও সাধারণ মানুষকে থামানো যায়নি। প্রায় এক ঘণ্টা পর মানুষ একটু শান্ত হলে সাংসদ আবার বাঁধের কাছে এসে এলাকাবাসীকে উদ্দেশ্য করে বক্তব্য দেন।’ ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকা কয়রা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. রবিউল ইসলাম বলেন, ‘কিছু উচ্ছৃঙ্খল মানুষ একটু সমস্যা করছিল। পরে এমপি সাহেব বক্তৃতা করলে তারা আবার শান্ত হয়ে যায়। তেমন কোনো বড় ঘটনা না।
প্রসঙ্গত, সম্প্রতি ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে জলোচ্ছ্বাসে উপজেলার মহারাজপুর ইউনিয়ানের দশালিয়া এলাকার পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বেড়িবাঁধটি ভেঙে যায়। ভাঙনের স্থান দিয়ে পানি ঢুকে প্রায় ১৫টি গ্রাম প্লাবিত হয়। পানিবন্দি হয়ে পড়ে প্রায় ১৫ হাজার মানুষ। পাউবো বাঁধটি মেরামত করতে না পারায় স্বেচ্ছাশ্রমে উপজেলার প্রায় তিন হাজার মানুষ বাঁধ মেরামতে নামে।
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।